YouTube বন্ধ হয়ে গেলে...

বেশ কিছু দিন যাবৎ বাংলাদেশে ইউটিউব বন্ধ ছিল। কিন্তু তাই বলে আমাদের প্রয়োজন শেষ হয়ে যায় নি। নিজেদের প্রয়োজনের স্বার্থে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে উপায় বের করে নিয়েছি।

তুমি নেই তাই

পরমিতা.. হয়তো বা আজ রাতে.. হয়তো বা তোমায় একটা চিঠি লিখতে পারি। তোমার অবর্তমানে আমার অনুভূতিগুলো সাজাবো তাতে।।

সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১৮

মিলির জন্য একটি সাদা গোলাপ


.
আজকাল খুব ব্যস্ত সময় কাটছে আমার ঘুমের পরিমাণও দিনদিন কমছে গড়ে ঘন্টা হবে হয়তো তাও আবার প্রতিদিন এক সময় ঘুমাতে পারি না কখনো রাতে, কখনো দিনের আলোয় ঘর অন্ধকার করে কখনো আবার দূরপাল্লার ভ্রমণে মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকলে বোধ হয় এমনই হয়ে থাকে নির্ধারিত কোনও টাইম টেবিল নাই রাত টায় শিডিউল থাকতে পারে, আবার দুপুর টায়ও হতে পারে এমনকি অনেক সময় ঈদেও ঠিক মতো পরিবারের সাথে সময় ব্যয় করা যায় না

একটি টেলিফিল্মে অভিনয়ের কথা ছিলোভালোবাসবো বলে অনেকটাই ধারণ করা হয়ে গেছে কথা ছিলো আজ সন্ধ্যা টায় শুটিং শুরু হবে কিন্তু সাড়ে পাঁচটার পর থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে অবিরত

আমাদের ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয়েছে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পেছনে একবার ভাবছিলাম এই সুযোগে একটু ঘুমিয়ে নিই কিন্তু এখন ঘুমাতে ভালো লাগছে না বৃষ্টির সময় আমার কিছুই ভালো লাগে না খুবই বিষণ্ন লাগে এই সময়টায় নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় মনে হয় বিজন মরুভূমির কোথাও আমি পথ হারিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আমি অন্যদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম সিনিয়রদের সামনে ধূমপান করতে নেই এতে অন্যায় হয় এখানে অনেকেই আমার বড়ো অবশ্য তারা জানে- আমি গোল্ডলিফ পছন্দ করি নিশ্চয়ই কেউ জেনে বুঝে এদিকে আসবে না

বাহিরে অঝোর বর্ষণ হচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে অনেক ভালো হতো কিন্তু সব সময়ে সব কিছু সম্ভব হয় না কলেজের পেছনে একটা বিশাল দিঘী রয়েছে দিঘীর স্বচ্ছ জলে নিশ্চয় আকাশটা ভেসে আছে চারিধারে তার নানা প্রজাতির গাছ যেনো আজন্মের অবগাহনে ব্যস্ত নিজের অজান্তেই আমি আরেকটা সিগারেট ঠোটে নিলাম
এতো বেশি পরিমাণে আগুন খেলে তো অকালেই মরে যাবেনকে যেনো কাকে বলছে হাহ হাহ আগুন কি খাওয়া যায়! আজকাল মানুষ কতো কী বলে... আবারও কানে এলো কথাটা এবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি- শুটিংয়ের কো-আর্টিস্ট মেয়েটি ওহ... এখানেও চলে এসেছে

ওর নাম জেনিফার মিলি ওর একটা গুণ হলো- তাকে একবারের বেশি স্ক্রিপ্ট বোঝাতে হয় না কী নিখুঁত তার অভিনয় খুব বেশি দিন হয়নি তার সাথে আমার পরিচয়ের এইতো সেদিন- “ZURHEMএর উইন্টার ফ্যাশন শো- তে আমি তো নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না তাকে অবিকল রূপার মতো লাগছিলো হুম... রূপার মতো কিন্তু রূপার তো এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকার কথা তার স্বামী একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আজ প্রায় বছর হয়ে গেলো রূপাকে ভুলতে পারিনি কখনো পারবো কি না তাও জানিনা রূপা কি তাহলে দেশে ফিরে এসেছে? এমন যদি না হয় তাহলে এই মেয়েটি কে? অভিন্ন অবয়ব তার যেনো রূপার প্রতিরূপ প্রতিবিম্ব

আমি কিছু না বোঝার ভান করে মিলিকে বললাম-“ জী... আমাকে বলছেন?” এবার সে পাল্টা প্রশ্ন করে-
তাহলে এখানে আর কে আছে?”
আমি বিরক্ত হলাম আমার খুব একা থাকতে ভালো লাগছিলো এই মুহূর্তে আমি শান্তভাবে বললাম-
আমি মরলে আপনার কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে?”
সে আর কথা বাড়ালো না শুধু বললো- “ওহ... তাই তোএবং আমাকে অবাক করে চলে গেলে এভাবে না বললেও পারতাম মনে হয় মেয়েটা কি কষ্ট পেয়েছে? জানিনা জানার প্রয়োজন আছে কি? মনে হয় না তবে আমার বোধ হয় ওর প্রতি এক ধরণের মায়া জন্মে গেছে সেই প্রথম দিন থেকেই যেনো সে রূপারই আরেকটি রূপ


.
শীতের বিকেল বারান্দায় ঝুলছে নিষ্প্রভ সূর্যের ক্ষীণ আলো কিছু পয়সালিলি বনসাই বহুদিন ধরেই এই বারান্দায় বাস করে তারা সেই সোনালী আলোর সঙ্গে দিনদিন ভাব জমিয়ে ফেলেছে পশ্চিমের আলো তাদের শরীরে স্পর্শ করলে তারা যেনো ক্রমশ প্রফুল্লতা ফিরে পায় আর সূর্যমামার রোশনি যেই মলিন হবে- অমনি বনসাইয়ের পাতাগুলো তাদের চিরাচরিত গোমড়া মুখগুলো মেলে ধরে কিছুক্ষণ পরই ইট পাথরের ছোট বড় দালানগুলোর ওপারে আজকের সূর্যটা মুখ লুকোবে তখনকার আকাশে রক্তিম আভা লেগে থাকে আমার কাছে তা মহাজাগতিক ব্যাপার মনে হয় প্রায়ই আমি এই নৈসর্গিক মুহূর্ত উপভোগ করি...

একটু আগে মুঠোফোনে একটাকলএসেছিলো কল টা মিলির ওরবার্থ-ডে পার্টিতে নাকি আমাকে থাকতেই হবে এই বছরে আমাদের সম্বোধন আপনি থেকেতুইয়ে নেমে এসেছে দেশে থাকলে অবসর সময়টা আমি ওর সাথেই কাটানোর চেষ্টা করি হিসেবটা খুবই সোজা আমার যেমন এই কুলে তেমন কেউ নেই, তারও এমনই আর আমার ভালো কিছু বন্ধুর মাঝে সেও একজন এই তো গেলো সপ্তাহে সবাই মিলে রাঙামাটি ঘুরে এলাম ইদানিং জীবনটাকে খুব সহজ মনে হয় এখন আর শুটিং-শিডিউলের শেকলে বাঁধা পড়তে হয় না আর নিজের জন্য ব্যয় করার মতো হাতে থাকে অফুরন্ত সময় সে যাই হোক আমাকে বেরুতে হবে এক্ষুণি

কুড়িল বিশ্বরোডে আজ খুব জ্যাম সময়টাও যেনো নিজের বিরুদ্ধে যাবার জন্য প্রতীজ্ঞাবদ্ধ ছোট্ট এই শহরে প্রতিনিয়ত মানুষ বাড়ছে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা নিত্য নতুন বাহনের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ পুরানো যান সরানো হয় না নিয়মিত আইন-কানুন সবই আছে, শুধু তার যথাযথ প্রয়োগের অভাব মাঝে মাঝে মনে হয়- ঢাকার পথে-সড়কে যেসব অনুপযুক্ত গাড়ি রয়েছে, তার চেয়ে আমাদের জীবন সময়ের মূল্য অনেক অনেক কম

মিলির বাড়িটি আজ আলোকিত আলোর মেলায় উদ্ভাসিত বাড়ির সদর দরজায় রঙ বেরঙের বেলুনে তার সৌন্দর্য বেড়ে গেছে অনেকগুণ ছোট বড় অনেক তারকাই এসেছে তবুও কীসের যেনো অভাব বাড়ির ভেতর সবকিছুই যেনো থেমে আছে কেউ কেউ বেরিয়ে যাচ্ছেন শোনা যাচ্ছে না কোনো মিউজিক সবার চেহারায় যেনো এক ধরণের চাপা শঙ্কার ছায়া লেপে দিয়েছে কে কোথাও কোনো গড়মিল হয়েছে নিশ্চয় মিলি কোথায়? তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না একজনকে জিজ্ঞেস করলে সে যা বললো তাতে আমি যারপরনাই বিস্মিত হলাম বিকেলেও তো তার সঙ্গে কথা হলো তখন তো সে সুস্থাই ছিলোমিলি হঠাৎ অসুস্থা হয়ে পড়লে তাকে নিকটস্থা একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে অবশ্য আজকাল কার কখন কী হয়ে যায়, তা অনুমান করার উপায় নেই কে জানে- দূরে কোথাও হয়তো কেউ একজন বাঁশির শব্দ তুলছে করুণ সূরে


.
একটার পর একটা মেঘের - বিছানো খোলা আকাশের বুকে কোনো চিল নেই, কাক নেই কোনও ছোট পাখি নেই একটু পরেই এই মেঘেরা হারিয়ে যাবে দূরে তাদের জায়গা দখলে নেবে নতুন কিছু টুকরো মেঘ তবে আকাশের কোথাও নীল নেই কোথাও বেদনার কায়া নেই ছায়া নেই কোত্থাও সূর্যের দেখা নেই কেবলই ধূসর যেনো কোথাও কেউ নেই কিছু নেই পুরোটা জুড়েই ছাইরঙা অসীম শূন্যতার বাস

আমি এগিয়ে গেলাম সমাধির দিকে অনুভূতিহীনভাবে কে জানতো- অকালেই চলে যাবে মিলি আমার হাতে একগুচ্ছ সাদা গোলাপ সেখান থেকে একটি গোলাপ রেখে দিলাম সমাধিতে বাকিগুলো থাক মিলির খুব পছন্দের ছিলো গোলাপ সাদা গোলাপ রূপাও পছন্দ করতো খুব

বিকেলটা একটু তড়িঘড়ি করেই শেষ হয়ে যায় কিন্তু সময়ের কুয়াশাচ্ছন্ন সন্ধ্যা আমায় যেনো পেছনে বেঁধে রাখতে চাইছে নিজের অজান্তেই ওইযে, রূপা বসে আছে কার সঙ্গে যেনো গল্প করছে আররেহ্... এযে দেখছি আমিই তাহলে আমি কে? অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি রূপার দিকে নাহ্... মনে হয় মিলি হবে হুম... মিলি পাশের লোকটা হয়তো অন্য কেউ একই আকৃতির কতো মানুষই তো বাস করে এই পৃথিবীতে হঠাৎ মিলি আমার দিকে ফিরলো ভ্রুকুঞ্চিত আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়েছে বোধ হয় ওহ... যে মিলি নয় আমার বোধ হয় কোথাও ভুল হচ্ছে ধূর... কাকে না কাকে মিলি ভেবে তাকিয়ে ছিলাম নাহ্... আমাকে বাসায় ফিরতে হবে বিশ্রাম নিতে হবে চারপাশে যা দেখছি আর যা অনুভব করছি- কোনোভাবেই মিলছে না স্মৃতিশক্তিও কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে চারিধারে যতোগুলো মুখ দেখছি সবই যেনো রূপা আর মিলি আমি কি পাগল হয়ে গেছি! আচমকা এক ঝটকায় হুমড়ি খেয়ে পড়ার উপক্রম হলো আনমনে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় সড়কের মাঝখানে চলে গিয়েছিলাম আর একটু হলেইডাবল ডেকারটি আমায় পিষে চলে যেতো ভাগ্যিস, ভদ্রলোক আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে অনেক ধন্যবাদ তাকে কিন্তু একটা বিষয় আমি বুঝতে পারিনা- কেন জানি আমার কাছের মানুষগুলো দূরে সরে যায় অথবা অচিনপুরে হারিয়ে যায় অবেলায় জানিনা, কেন এমন হয়...