মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৩

ব্লগ কি জিনিস? ব্লগার মানে কি নাস্তিক? আমরা ব্লগিং করি কেন?

প্রথম প্রকাশঃ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০৭|

সামহোয়্যারইন ব্লগ

দৈনিক আমারদেশ কর্তৃক ব্লগ ও ব্লগারদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর পর লিখেছিলাম--

     
অবতরণিকাঃ
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
রাজাকারের ফাঁসির দাবীতে গণ-আন্দোলনের অর্ধ মাস পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই আমাদের প্রাপ্তির পাতা ভরতে শুরু করেছে। তবে হারাবার খাতায়ও কিছু কিছু লিখতে হচ্ছে। আমরা তিন তিনটা প্রাণ হারিয়েছি। সেই সাথে রাজাকার, জামাত-শিবিরের অপপ্রচার আর মিথ্যা প্রোপাগান্ডা তো রয়েছেই। কতটুকু নীচ ও নিম্ন মানসিকতার হলে তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে অশ্লীল ছবি ফটোশপে এডিট করে প্রজন্ম চত্বরের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। অপর দিকে এই সব মিথ্যাচার সরলমনা ধর্মভীরু মানুষজনের উপর প্রভাব ফেলছে। ব্লগাররা নাকি নাস্তিক!! তারা ব্লগারদের খুন করতে মিছিলেও পর্যন্ত নেমেছে। এই লেখার সূত্রপাত সেখান থেকেই।




ব্লগ কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
ব্লগ (Blog) এর উৎপত্তিঃ এটি উদ্ভব হয়েছে ইংরেজি Web Log থেকে। ১৯৯৭ সালের ১৭ই ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জন বার্জার সর্বপ্রথম WebLog যুক্তশব্দ তৈরি করেন। এবং ১৯৯৯-এর এপ্রিল অথবা মে এর মাঝামাঝি সময়ে পিটার মেরহোলজ নামক এক ব্যক্তি এটাকে ভেঙ্গে We Blog ধরে সংক্ষেপে Blog নামে ব্যবহার শুরু করেন। এর কিছুদিন পর থেকেই Blog বিশেষ্য এবং ক্রিয়া উভয় অর্থেই ব্যবহার হতে থাকে। ১৯৯৯-এর আগষ্টে অনলাইন লেখালেখির সাইট pyra.com (যা বর্তমানেও সচল) blogger.com নামে একটি ব্লগ সাইট তৈরি করা হয়, যা ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে সার্চ ইঞ্জিন গুগল (Google.com ) কিনে নেয়। পরে এটি Blogspot এর রূপ নেয়। এবং এটিই সর্বপ্রথম বিনামূল্যের ব্লগ সাইট। বাংলা ভাষায় ব্লগিংয়ের যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালের জানুয়ারী মাস থেকে।

আভিধানিক অর্থঃ অনলাইন দিনপত্রী, অনলাইন দিনপঞ্জি, অনলাইন দিনলিপি, অপেন ডায়েরি, অনলাইন সাংবাদিকতা ইত্যাদি (বিশেষ্য)। অনলাইনে লেখালেখি করা, অনলাইনে ডায়েরি লেখা, অনলাইনে দিনপঞ্জি লেখা (ক্রিয়া)।

পারিভাষিক অর্থঃ ব্লগ হলো এমন একটি ওয়েব পেজ যা নিয়মিত হাল নাগাদ করা হয়।
আর যিনি কাজটি করে থাকেন তাকে ব্লগার (Blogger) বলা হয়।

কেন আমরা ব্লগিং করি?
আমরা যারা ব্লগিং করি- প্রত্যেকেরই একটা না একটা লক্ষ্য কিংবা উদ্দেশ্য থাকে। বিভিন্ন জনের উদ্দেশ্য বিভিন্ন রকম। ঠিক তার চাহিদানুযায়ী হয়ে থাকে। কেউ পরিচিতি পেতে। কেউ জ্ঞান আহরণ করতে। কেউ বা নিজের জ্ঞান মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আবার কেউ আসে অলস সময় কাটাতে। তবে বেশির ভাগ মানুষ এখানে আসে সাহিত্যচর্চার স্নিগ্ধ, মনোরম একটা পরিবেশের খোঁজে। সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকার পর একজন ভালো লেখকেরও লিখতে ইচ্ছে করেনা। তাছাড়া সাহিত্যচর্চার জন্য প্রয়োজন সুন্দর একটা প্লাটফর্ম, যা বাইরের দুনিয়ায় অনেক সময়েই হয়ে উঠেনা। অপরদিকে এখানে থাকে লেখালেখির সমাহার, যা ব্যক্তিকে মূহুর্তেই সেই পরিবেশে পৌঁছে দেয়।


     
বাংলাদেশের চলমান আন্দোলন কি নাস্তিকদের?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
অনেককেই বলতে শুনেছি- শাহবাগে নাকি নাস্তিকদের আড্ডা! সেখানে নাকি গাঁজার মেলা! বড়ই পরিতাপের বিষয়। যারাই এসব কথা বলে- হয়তো তারা জামাত-শিবির বা ওদের দালাল। অথবা শাহবাগেই যায়নি। শুনে শুনে বুলি আওড়াচ্ছে। অথচ তারা জানে না যে, শোনা কথা না জেনে আরেকজনকে বলা মানেই মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়া। আগে শাহবাগ আসো। তারপর তোমার যা বলার বলো।

আমার এক আত্মীয় আছে। এস. এস. এ'র উপ-পরিচালক। আইনের লোক। সব সময় আইন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। গত পরশু তিনি আমাকে বললেন- আচ্ছা ইখতামিন! তোমরা যে ব্লগার। এই ব্লগার মানে কি? আমি তাকে পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম- আপনিই বলেন। আপনি ব্লগার মানে কি মনে করেন? তিনি বললেন- প্রতিবাদী! পরে আমি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি- ব্লগার কাকে বলে। ব্লগার মানে প্রতিবাদী নয়। বরং বর্তমান আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা আমরা ব্লগার।

আবার কেউ কেউ বলে যারা ব্লগার, তারা নাকি নাস্তিক (?) আমার কলিগরা আমাকে বলে- আমি নাকি নাস্তিক হয়ে গিয়েছি!!! X( এই তো. গতকালও নাকি চট্টগ্রামে ব্লগারদের বিরুদ্ধে মিছিল করা হয়েছে! আমি তো মনে করি তারা ব্লগার মানে কি, তাই জানে না। তবে হ্যা! আমি স্বীকার করছি। আমাদের এই আন্দোলনে কিছু নাস্তিক রয়েছে। কিন্তু নাস্তিক, সেকি বাঙগালী নয়? এই দেশের নাগরিক হিসেবে তারও অধিকার আছে অন্যান্যদের সাথে মিশে চলার। এবং এই কারণেই তাদেরও অধিকার আছে আমাদের সাথে ব্লগিং করার। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না- সারা বাংলাদেশে নাস্তিকের সংখ্যা গুটি কয়েক। সেই তুলনায় ব্লগগুলোতে তাদের সংখ্যা হাতে গোণা। একজন নাস্তিক। সে যদি তার মতো করে লিখতে চায়। লেখুক না। ক্ষতি কী! আপনি যেই চায়ের দোকানে চা পান করেন, সেখানে কি আপনার এলাকার সবচেয়ে বাজে লোক মন্টু মিয়া চা পান করে না? তাই বলে কি আপনি কোনও দিন বলেছেন- মন্টু মিয়া এই দোকানে আসতে পারবে না? সেই লোকটির পাশে বসলে আপনি যেমন মন্দ লোক হবেন না, ঠিক তেমনি দু'একজন নাস্তিকের পাশাপাশি থেকে ব্লগিং করলেই একজন ব্লগারকে আপনি নাস্তিক বলতে পারেন না। তবে হ্যাঁ! কোনও ধর্মকে আঘাত দিয়ে লেখালেখি করা মোটেই উচিৎ নয়। এবং এই ধরনের মানসিকতার নাস্তিকদের সবাই মনে-প্রাণে ঘৃণা করে। কিন্তু আপনাকে মানতেই হবে- এই আন্দোলন কোনও নাস্তিকতার নয়। নয় কোনও দলের বা কোনও সম্প্রদায়ের। এই আন্দোলন একটি জাতির। বাঙ্গালী জাতির কলঙ্ক মোচনের।



এই লেখা তাদের জন্যঃ–
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
• যারা জানেন না- ব্লগ কি? ব্লগার কি?
• যারা টং দোকানের শীতল চা পান করতে করতে ব্লগার আর নাস্তিক
  দুটোকে গুলিয়ে ফেলেছেন
• যারা জামায়াত-শিবিরের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হচ্ছেন
• যারা যারা ভালকে ভাল, খারাপকে খারাপ বলতে পারেন না।



তথ্যসূত্রঃ
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উইকিপিডিয়া-১
উইকিপিডিয়া-২
উইকিপিডিয়া-৩
ইউসুফ খান
এম. মিজানুর রহমান সোহেল

     

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন