সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩

অর্থহীন

চাঁদের হাট। শুনতে খারাপ লাগে না। বেশ বড় একটা গ্রাম। জেলা শহরের সদরে থাকার কারণে সরকারী কলেজ, সদর হাসপাতাল, বাস টারমিনাল, পুলিশ ষ্টেশন, আদালত সহ অনেক কিছুই রয়েছে এই গ্রামে। পৌরসভার মাঝ থেকে শুরু করে একেবারে শেষপ্রান্তে চরের কাছাকাছি গিয়ে থেমেছে এর সীমানা। দুপাশ দিয়ে চলে গেছে পিচঢালা বহু পুরানো দু'টি পথ। উত্তর পার্শ্বে জেলা শহরের মহাসড়ক। পশ্চিমে চরাঞ্চল। গাঁয়ের মধ্যখানে চিড় ধরিয়েছে চিকন একটি খাল। সোজা গিয়ে মিশেছে বদি চৌধুরীর হাটে। এই গ্রামের জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ দেশের বাইরে থাকে। এদের অনেকেই বছরে দু-একবার এসে বেড়িয়ে যায়। সাধারণতঃ গ্রামের মানুষের যা স্বভাব থাকে তা তো আছেই। বরং এই গ্রামের মানুষের আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এরা যদিও একটু শহুরে ভাব দেখায়। কিন্তু একের কথা অন্যের কানে লটকাবার বেলায় এখানকার মেয়েদের সাথে পুরুষেরাও তাল মিলিয়ে চলে। অপরের সংসারে আগুন লাগলেই যেন তারা মহাখুশি। তবে একটা ব্যাপার খুবই ভালো লাগলো। এই গ্রামের শতকরা ৩০ ভাগ বসবাসকারী হিন্দু হলেও কখনও এখানে হিন্দু-মুসলিম সমস্যা দেখা দেয়নি। গ্রামের বহু জায়গাতেই হিন্দু ও মুসলিম বাড়ির আঙ্গিনা একেবারেই সংযুক্ত। নতুন কেউ দেখলে বুঝতেই পারবেনা হিন্দু বাড়ির সীমানা কোনটা। 
চাঁদের হাটের হিরালাল কলোনী পেরিয়ে আরেকটু দক্ষিণে গেলেই একটা মসজিদ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দু'বছর আগে মসজিদটা দ্বিতল করা হয়েছে। একটা বিদেশী সংস্থার অনুদানে। এখানের যেই মসজিদ কমিটি আছে, তার সভাপতি স্থানীয় সরকারী কলেজের একজন প্রফেসর। সেক্রেটারি সাহেব কলেজিয়েট এর অধ্যক্ষ। এলাকার গণ্যমান্য হিসেবে বেশ পরিচিত। স্বনামধন্য আদমী তারা। গ্রামের সালিশ-দরবারে প্রায়ই তাদের বিচারকের আসনে বসতে হয়। তবে সেক্রেটারির বিরুদ্ধে পাতানো সালিশের অভিযোগ উঠে প্রায়ই। যদিও তিনি এসবকে পাত্তা দেননা একটুও। আর প্রফেসর সাহেবের কথা না হয় নাই বললাম। শুধু মাঝে-সাঝে একটু আধটু বুজরুকি ভাব ধরেন।
অন্য সব মসজিদের মতো এই মসজিদেরও একজন ইমাম আছেন। তিনি এই এলাকার ধর্মীয় সকল কাজের কাজী। জানাজা থেকে শুরু করে ঈদের নামাজ পর্যন্ত সকল দায়িত্বে নিয়োজিত। প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ তিনি এখানে। মাঝে-সাঝে দরবারেও হাজির থাকেন। কোনও বাড়ীতে মিলাদ পড়াতে গেলে মুরগীর বড় টুকরাটা যেতে হবে তার পাতেই। খবর দেখার নামে টিভি চ্যানেল দেখা তার জন্য বৈধ। ওই মসজিদের একজন সহকারী ইমামও আছে। যেন আসমান ফুটো করে স্বর্গ থেকে নেমে আসা একজন নিষ্পাপ মানুষ। মসজিদ কোয়াটারে তাকে একটা বাসা দেয়া হয়েছে বটে। কিন্তু তার খাবারের ব্যবস্থা এলাকার মানুষই করে থাকে। একেক দিন একেক বাড়ি থেকে তার জন্য খাবার পাঠানো হয়। মাঝে মাঝে খাবার পাঠানো হয় না। বরং তাকে দাওয়াত দেয়া হয়। তখন তিনি নিজেই সেই বাড়িতে গিয়ে খেয়ে আসেন। এই রকম দু'একটা বাড়িতে প্রায়ই তাকে যেতে দেখা যায়। শোনা যায়, বাসার মেয়েদের সাথে বসে বসে খানিক গল্পও করেন এই আসমানী মানুষ। তবে কেউ কেউ বলে থাকেন- কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা তার বাসার সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করার সময় তিনি নাকি বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকেন ওদের দিকে। বাড়ি বাড়ি মেয়েরা এইসব বলে শুধু হাসাহাসিই করে। হাসির কথাই বটে। একজন হুজুর মানুষের চরিত্রের রূপ তো এই রকম হতে পারে না!...

১৪ শ্রাবণ ১৪২০, ২৯ জুলাই ২০১৩
রাত ৩ টা

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন