মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৩

আলেম সমাজ আজ নিজেদের ভুলে কঠিন ষড়যন্ত্রের কবলে

প্রথম প্রকাশঃ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২৯
সামহোয়্যারইন ব্লগ


গণজাগরণ আন্দোলন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতের মদদে হেফাজতে ইসলাম গঠনের পর লিখেছিলাম

অনুক্রমণঃ পেছনের কথা
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
পাঠক! আপনারা জানেন। গত ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩ ইং তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পাঁচ-পাঁচটি মামলায় অপরাধী প্রমাণিত হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন, যা দেশের সর্বোস্তরের মানুষকে হতাশ ও হতবাক করে। জনমনে প্রবল ঘৃণা ও ক্ষোভের জন্ম হয়। সারা দেশের মানুষ যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়, ঠিক তখনই কিছু অনলাইন লেখক (ব্লগার) এর উদ্যোগে শাহবাগ চত্বরে (প্রজন্ম চত্বর) একটি গণজাগরণ মঞ্চ তৈরী করা হয়। এবং একে কেন্দ্র করে এক প্রতিবাদ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। এই ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ আসতে থাকে।
প্রথমে যারা এই আন্দোলনকে অনর্থক ভেবেছিল, পরে তারাও এর সাথে সংহতি প্রকাশ করে। এই আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দান শোলাকিয়ার ইমাম সাহেব আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ শতাধিক আলেম নিয়ে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এসে নামাজ পড়ে দোয়া করেছিলেন। এই আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েই চট্টগ্রামের অনেক মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক রাজাকারের ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন করেছিলেন । এর সাথে সংহতি জানিয়ে দেশের সবখানে আন্দোলন চলতে থাকে। আন্দোলন চলে পৃথিবীর অনেক দেশে । কোথাও তপ্ত রোদে শরীর জ্বালিয়ে, আবার কোথাও কুয়াশায় ঢাকা শীতে অথবা কোথাও তুষারপাতে দাঁড়িয়ে থেকে। বহুস্থানে এর মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয় কাকভেজা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেজাতি, ধর্ম, বর্ণ ও দলমত নির্বিশেষে সকলেরই প্রত্যাশা ছিল যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের যেনো ফাঁসি হয়। এবং টানা সতের দিন পর মহাসমাবেশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করার পর গণ জাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়।

এমনই মূহুর্তে জামায়াত-শিবির যখন দেখল- তাদের এবার আর রক্ষা নেই। তখন তারা ফন্দি আঁটতে লাগলো। ইতোমধ্যেই নাস্তিক ব্লগার রাজীবের খুন হয়। তবে সকলেরই ধারণা, এই আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে শিবিরকর্মীরা তাকে খুন করে। যেহেতু রাজীবের কিছু ধর্ম বিরোধী লেখা ছিল। আর সে শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষে ছিল, তাই জামায়াত-শিবির এবং তাদের মদদদাতাদের কয়েকটি পত্রিকা সত্য-মিথ্যার ভুনা খিচুড়ি তৈরী করে রাজীবের নামে চালিয়ে দেয়। তাদের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল দেশের মুসলমানকে ক্ষেপিয়ে মারমুখী করে তোলা। এবং রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে চলমান এই আন্দোলনকে পুরোপুরি বানচাল করা। নতুবা এই লেখা এতোদিন (রাজীবের জীবদ্দশায়) কেনো প্রকাশ করা হলোনা? কেনো গত দুই-আড়াই বৎসর যাবৎ এইসব জিইয়ে রাখা হলো? তবে জামায়াতের এই উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও সফল। ২২শে ফেব্রুয়ারীর সারাদেশে তাদের তান্ডবই এর প্রমাণ। তারা মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে এইভাবে যে, ব্লগাররা নাস্তিক। তারা ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করে। তারা ইসলামের শত্রু। আর এই আন্দোলন ইসলাম ধর্ম বিরোধী। সুতরাং ব্লগারদের বিচার চাই! এবং এটাও প্রমাণ হয়ে গেল যে, নিকৃষ্ট জামায়াত এই ক্ষেত্রেও ধর্মকে বিক্রি করে দিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ এতো বোকা নয়। দেরিতে হলেও। অনেকেই ধূর্ত শেয়ালতুল্য জামায়াতের এই ঘৃণ্য চালাকি বুঝতে পেরেছেন। তারা আবার আন্দোলনমুখী হচ্ছেন। আর জামায়াত নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে আনল। লেজ কাটা শেয়ালদের যা হয় এই আর কি?


বড়ই পরিতাপঃ আলেম সমাজ আজ নিজেদের ভুলে কঠিন ষড়যন্ত্রের কবলে
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৫,০০০ যা সরকারি মাদ্রাসার তুলনায় অনেক বেশি। বিভিন্ন দাতা তহবিল এদের আয়ের উৎস। এরা সরকার থেকে কোনও ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা নেয় না। তবে বিগত সরকারের আমলে কওমী মাদ্রাসা বোর্ড (বেফাকুল মাদারিস) তাদের শিক্ষার সরকারী স্বীকৃতির জন্য কয়েক দফা আন্দোলন করে। যা সে সময়ের বহুল আলোচিত খবরগুলোর অন্যতম। বর্তমান আওয়ামী সরকারের সময়েও সরকার এবং কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের প্রতিনিধিদল কয়েক বার আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু উভয় সরকারের আমলেই যখনই তাদের সিলেবাস সংস্কার করে ইংরেজী ও অন্যান্য বিষয়গুলো প্রবেশ করাতে প্রস্তাব দেওয়া হয় (উল্লেখ্য, কওমী মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণীর পর বাংলা-ইংরেজীর কোনও বই নেই), তখনই তারা বেঁকে বসেন। আর আলোচনা ভেস্তে যায়। যাই হোক বহু আলোচনার পর সরকারীভাবে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা সনদ স্বীকৃতি দান এবং এই মাদ্রাসাগুলোকে সরকারীকরণের কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে

কিন্তু যে কথা বলতে চেয়েছি- কওমী মাদ্রাসার যারা ধারক-বাহক, তাঁদের এই ধরণের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আজ তাঁরা এবং তাঁদের ছাত্র-ছাত্রীরা আধুনিক বিজ্ঞান-তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেক ধাপ পেছনে। এইসব জ্ঞান তাদের নেই বললেই চলে। তবে কিছুটা ব্যতিক্রম তো থাকেই। সেটা ভিন্ন কথা। আজ যে তাঁরা ব্লগারদের শাস্তির ব্যাপারে দাবী উত্থাপন করেছে, তা খুবই হাস্যকর। আপনার খারাপ লাগলেও মানতেই হবে। কারণ, কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী বর্তমান বিজ্ঞান-তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞ। সুতরাং যারা ''ব্লগার'' শব্দটিই হয়তো শুনেছে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে এসে, তারা ব্লগ বা ব্লগার সম্পর্কে কীরূপ ধারণা করতে পারে তা সহযেই যে কারো বোধগম্য।

আমি আলেমদের বলতে চাই, ব্লগ ও ব্লগারের সংজ্ঞা যেনে তারপর সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিন। আর লক্ষ লক্ষ ব্লগারের মাঝে দুই একজন নাস্তিক রয়েছে। তাই বলে সব ব্লগারদের ফাঁসি চান! কেনো? আপনারা তো ভালো বুঝবেন- الجزء لا تعمم على الكل - ''কোন বস্তুর কিছু অংশ তার মূল বস্তুর উপর আধিপত্য লাভ করে না।'' যেমন- এক বস্তা আমের মাঝে ৫টা আম পঁচা। তাই বলে কি আপনি পুরো আমের বস্তা পানিতে ফেলে দেবেন? অথবা সবগুলো আমই নষ্ট। শুধু ৫টা আম ভালো। আপনি কি তখন ঐ এক বস্তা আমকে ভালো বলবেন? আরও দেখুন। কোনও ব্যক্তি। সে যে ধর্মেরই হোক, সে যদি জঙ্গি হয়, তাহলে তার একার অপরাধের জন্য তার ধর্মকে জঙ্গি ধর্ম বলা যাবে না। এটাতো আপনারা মানেন। তাহলে দু একজন নাস্তিকের কারণে এতোগুলো মানুষকে বিষোধগার করার মনে কি?

অপরের দেখানো ভ্রান্ত পথে না চলে অন্তত নিজের চেতনায় চলুন। তবুও ষড়যন্ত্রের কবল থেকে রেহাই পাবেন। আন্দোলনের নামে আপনারা বহু কিছু করেছেন। যার ফল ভোগ করছে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার বাহিনী জামায়াত-শিবির। আপনারা কিছুই বুঝতে পারছেন না। কিন্তু জামায়াত ঠিকই বরাবরের মতো ধর্মকে পানির দরে বেচে ফেলছে। তবে এখনও সময় আছে। এই মূহুর্তে ধর্মীয় কোনও ইস্যুতেই জামায়াতের ডাকে সায় দেয়া চলবে না। وما علينا الا البلاغ المبين





তথ্যসূত্রঃ
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
ব্লগ ও ব্লগার বিষয়ে আমার কথা
উইকি- প্রজন্ম চত্বর
প্রথম আলো- যুদ্ধাপরাধের চেয়ে বড় পাপ নেই: শোলাকিয়ার ইমাম
দেশের সবখানে আন্দোলন চলতে থাকে। আন্দোলন চলে পৃথিবীর অনেক
   দেশে

চট্টগ্রামের অনেক মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক রাজাকারের ফাঁসির দাবীতে
   মানববন্ধন করেছিলেন

উইকি- কওমী মাদ্রাসা
জনকণ্ঠ- কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা সনদ স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন