বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৩

কাউন্ট ড্রাকুলা–– ৩

প্রথম প্রকাশঃ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:০৬| 

সামহোয়্যারইন ব্লগ



সঞ্জিব হায়দারের ডায়েরী থেকে
২ এপ্রিল, ১৮৩৭

আজ শরীরটা অত্যন্ত দুর্বল। গলার ক্ষতটা এখনও শুকায়নি। খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তবুও প্রতিদিনের মতো আজও ডায়েরী লিখতে বসলাম। গতকাল রাতে এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। এমনিতেই গত কয়েকদিন যাবৎ আশপাশের পরিবেশে কিছু একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। গোধূলীর ম্রিয়মান সূর্যটা পশ্চিমাকাশে গিয়ে কয়েক মিনিট স্থির হয়ে থাকে। এরপর হঠাৎ করেই হারিয়ে যায় দিগন্তের পেছনে। মনে হয় কেউ ওটার ঘাড়ে ধাক্কা মেরে অধোমুখে ফেলে দিয়েছে। রাতের আকাশটাকে দেখলে মনে হয় যেন অন্য কোনও পৃথিবী। চাঁদের আলো যেন প্রকৃতিতে অপূর্ব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই নেশা ধরে যায়। তখন মনে হয় দূর থেকে কেউ সম্মোহিত করছে আমাকে। প্রায় রাতেই আকাশে একটা প্রকান্ড বাদুড়কে উড়তে দেখা যায়। নিচে নেমে আসলে মনে হবে একটা চিল। কিন্তু মুখটা দেখতে মানুষের মতো। কোনও পাখি উড়তে থাকলে একটা আওয়াজ হয়। কিন্তু তার কিছুই শোনা যায় না এই বাদুড়ের কাছ থেকে। ওটার দু’চোখ টকটকে লাল হয়ে অদ্ভূতভাবে আগুনের মতো জ্বলজ্বল করতে থাকে। দেখলেই বোঝা যায় ওটা কোনও পাখিই না।

এইসব কারণেই গতরাতে প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত পিশাচ বিষয়ক কয়েকটা বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলাম। সহসা দেখলাম জানালার পর্দার ওপাশে কারো ছায়া। ভাবলাম কেউ হয়তো কোনও প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু একটু পরেই খেয়াল হলো- এই দোতলা ফ্লাটের ওদিকটায় কোনও বারান্দা নেই। সুতরাং জানালার ওপাশে কোনও মানুষের পক্ষেই দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়। ঝট্ করে আবার তাকালাম জানালাটার দিকে। আমি অবাক। সেখানে কেউই নেই। উঠে গিয়ে জানালাটা খুলে বাইরে তাকালাম। নাহ, আশেপাশে কিংবা নিচে কোথাও কেউ নেই। তবে কি আমার চোখের ভুল? হতে পারে। অনেক রাত হয়েছে। বেশি রাত জাগলে দৃষ্টিতে ভ্রম হয়। হয়তোবা তা-ই হবে।

কিন্তু আমার দু’চোখে ঘুমের কোনও চিহ্নই নেই। অনেক্ষণ যাবৎ চোখের পাতা বন্ধ করে রেখেও ঘুমাতে পারলাম না। আমি বুঝতে পারছিনা- আজ আমার কী হলো! বাতি নেভানো আছে। কিন্তু মাঝে মনে হচ্ছে রুমের ভেতর কিছু একটা ছুটোছুটি করছে। কিছুক্ষণ পর পর একটা আলোর ঝলকানি দেখতে পাচ্ছি। কখনও সেটা নীল। আবার কখনও লাল। যেনো ঘুরছে সারা ঘরে। একবার জ্বলছে। আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। কী ওটা!!! একবার মনে হলো- আমার বিছানায় কিছু একটা উঠেছে। বিছানাটা কেঁপে উঠল। দ্রুত বাতি জ্বাললাম। ঘরে আমি ছাড়া আর কেউই নেই। দরজাটাও ভেড়ানো। সুতরাং কেউ দৌড়ে বেরিয়ে গেলেও দরজা স্থির থাকতো না। তাছাড়া ঝট্ করে কেউ এখান থেকে সরে চলে গেলে একটু হলেও কিছুটা আওয়াজ হতো। অথচ পিনপতন নিরবতা। যাহ্ কী সব আজেবাজে ফালতু চিন্তা পেয়ে বসল আমাকে। একবার নিজেকেই প্রশ্ন করলাম- আমি কি পাগল হয়ে গেছে? নতুবা আজ আমার এমন হচ্ছে কেনো? এর জবাব আমি পেলাম না। আমি পাগল নই। কিন্তু কিছুতেই কিছু মিলাতে পারছিনা। হতাশ হচ্ছি বারবার। জানালার পাশে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা। অতঃপর অন্ধকার রুমে লাল-নীল আলোর ছুটোছুটি। বিছানায় ভিন্ন কিছুর অস্তিত্বানুভূতি। এতো কিছু ঘটছে। অথচ একটু পরই তা কোনও ধরনের চিহ্ন ছাড়াই মিলিয়ে যাচ্ছে। এটা নিছক কোনও কাকতালীয় ব্যাপার হতে পার না। নিশ্চয়ই এর অন্য কোনও কারণ রয়েছে। যা মানব সভ্যতার জন্য অশুভ। কথাটা মনে হতেই শিরদাড়া থেকে মেরুদন্ড বেয়ে একটা শীতল স্রোত নিচের দিকে নেমে গেল। আমি কখনও ভয় পাইনি। কিন্তু আজ আমার সেই অসীম সাহস যেনো বাতাসেই মিলিয়ে গেল। মাথার ওপরে ফ্যান ঘুরছে ফুল স্পীডে। অথচ আমার সারা শরীর দর দর করে কেবল ঘেমেই চলেছে। বিছানার চাদরটা ইতোমধ্যেই ভিজে চুপচুপ। প্রচন্ড ভয়ের কারণে আমি কাঁপতে কাঁপতে ঘামতে ঘামতে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম। এতেও শেষ রক্ষে হলো না। আমি শুনতে পেলাম অনেকগুলো নেকড়ের ডাক। ওগুলো হুংকার করছে। গর্জন করছে। যেনো আমার পাশেই রয়েছে ওগুলো। আমি দু'হাতে দু'কান চেপে ধরে রাখলাম। কতোক্ষণ এভাবে কেটেছে জানিনা। বোধ হয় আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম।

যখন চেতনা ফিরেছে, দেখি আমার চারপাশে বাড়ির সকলেই বসা। সকালে তারা আমাকে বিছানায় অদ্ভূতভাবে পড়ে থাকতে দেখে। কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত বিছানা থেকে নিচের দিকে ঝুলে ছিল। ঘাড়ের কাছে গলায় অস্বাভাবিকভাবে দু'টো ছিদ্র দিয়ে ফ্লোরে টপ টপ করে ফোটা ফোটা রক্ত ঝরছিল। কিন্তু আমার শরীর দেখে মনে হচ্ছে অনেক রক্ত গায়েব হয়ে গেছে। সমস্ত শরীর ঝিম্ ঝিম্ করছে। ডাক্তার এসে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে গেছে। বলেছে কয়েকদিন বিশ্রামে থাকতে হবে। সবার একটাই প্রশ্ন কিভাবে এরকম হলো! কিন্তু আমার কথা কি তারা বিশ্বাস করবে!!!
মানসিকভাবে আমি এখন খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি... বিকেল ঘনিয়ে আসছে। খুব ভয় ভয় করছে। গতরাতের ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটলে এইবার আমি মরেই যাবো। ওহ... খোদা! আমায় রক্ষা করো....................
(চলবে...)




লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): ড্রাকুলাপিশাচ কাহিনীঅশুভ আত্মা ;




২২টি মন্তব্য
১. ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:২১
জাকারিয়া মুবিন বলেছেন:
হুম আমারে ভুতে পাইছে আরকি রাইতে এই পোস্ট পরুম। এহনি পইরা ফালাইসি। :)
১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৯
লেখক বলেছেন:
হাহাহাহা
ভালো করেছেন :P

ভালো থাকুন. :)
২. ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:১৩
কস্কি বলেছেন: তাইলে কাইলকা ফজরের আগে পড়মু নে ....... ;)




|-) |-) |-) :-P :P :P B-))
১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৪
লেখক বলেছেন:
আপনি তো দেখি পড়েই ফেলেছেন.............. ;)
ভালো থাকুন :)
৩. ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৮
স্পাইসিস্পাই001 বলেছেন: চলবে না , দৌড়াবে ......+++

কাউন্ট ড্রাকুলা তো জমে উঠেছে.......

পোষ্ট ফলো করছি কিন্তু সো খেয়াল কৈরা.....

ধন্যবাদ ভ্রাতা .... ভাল থাকবেন....
১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৫
লেখক বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ ভাই.
খুব খেয়াল করে লিখছি :P

ভালো থাকুন :)
৪. ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪
শায়মা বলেছেন: ড্রাকুলা নাম দেখেই আমি নাই হয়ে গেছি!!!!
১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:০৬
লেখক বলেছেন:
আমি জানতাম, আপনি ড্রাকুলাকে অননে...ক ভয় করেন ;)

হাহাহা
থাক. ভয় পাবেন না। ড্রাকুলা আপনার কিছুই করবে না :P :P
৫. ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৯
কাজী মামুনহোসেন বলেছেন: হাতের সামনে খাবার দিয়া রাতে খাওয়ার কথা বলেন !!
ভাই আপনেগ কাজ কাম দেইখ্যা অবাক লাগে.... ;) ;) :D :D


অসাধারন
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি চাই...
১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:১৬
লেখক বলেছেন:
এর পর থেকে সময়ের টা সময়েই দেবো :)

অনেক অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই.
ভালো থাকুন.
৬. ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩২
মামুন রশিদ বলেছেন: হুম, লোমহর্ষক :-& :-&



এই পর্ব গ্রেড সহ পাশ ;)
১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮
লেখক বলেছেন:
:)

অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই.
ভালো থাকুন. :)
৭. ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:০৪
আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: সাহস কইরা রাতেই পড়বো!
১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮
লেখক বলেছেন:
আচ্ছা. :)
৮. ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৪০
রোেক্য়া ইসলাম বলেছেন: ভেবেছিলাম সত্যি রাতের বেলাই পরবো।
কিন্তু ধৈর্য ধরে রাখতে পারলাম না। তাই এখনি পড়ে ফেললাম।
খুব ভালো লাগলো।

গতরাতের ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটলে এইবার আমি মরেই যাবো। ওহ... খোদা! আমায় রক্ষা করো... অবশ্যই রক্ষা করবেন না হলে পরের পর্ব পাব কোথায়? অপেক্ষায় রইলাম....................................
১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:২০
লেখক বলেছেন:
হাহাহা.
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু
পরের পর্ব এখনও মাথায় নেই. কারণ, রক্ত শূন্যতায় মাথাটা হ্যাঙ হয়ে গেছে :P :P

ভালো থাকুন. :)
৯. ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৩৬
আশিক মাসুম বলেছেন: জি রাতের বেলায় পড়লাম :)


১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:২০
লেখক বলেছেন:
এটা কোনও গল্পই হয় নাই :(
১০. ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৩৯
আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: রাইতে পড়লাম মোটেই ভয় পাই নাই। B-)
১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:২১
লেখক বলেছেন:
আমি ব্যর্থ :(



B-) B-)) :P
১১. ১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৫৩
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: রক্তের গন্ধ ফেলেই ড্রাকুলা নাগাল পায়
তার সাথে দেখা হলেই ড্রাকুলাই হয়ে যায়
অন্ধকারে মিশে
থাকে অতি পাশে
সর্বনাশের দেখ কি একাই সে বহুরূপে নিজেরে সাজায় ।
খবরদার তার খপ্পরে পড়ে
নিজের মাথা নিজেই চিবিয়ে খেয়ে ভয়ংকর চউখ হবি
অন্যকেও চিবাতে ড্রাকুলার রুপ ধরে
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৪১
লেখক বলেছেন:
অনেক ধন্যাবাদ পরিবেশ বন্ধু
ভালো থাকুন. :)

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন