শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৩

টোকাই নিয়ে কিছুক্ষণ

৩রা এপ্রিল, ২০০৮। দুপুরের আকাশে চৈত্রের কড়া রোদ ছিল। এখন আর নেই। ৪টার পর হতে দখিনা বাতাসে মেঘমালা উড়ে এসে মাথার উপর আকাশে জমা হতে থাকে। এখন ঘড়ির কাটায় ৫টা বাজে। কোথাও রোদ নেই। মেঘে ছেয়ে গেছে গোটা আকাশ। একটু পর পর বাতাস এসে রাস্তার ধূলোবালি উড়িয়ে নিতে লাগলো। মধুমিতার পাশ দিয়ে ব্রাদার্স ক্লাবের দিকে হেটে যাচ্ছি। দেখি রাস্তার ধারে একটি ছেলে। বয়স তার আনুমানিক ১২ থেকে ১৫ হবে।
পরনের ফুল প্যান্টটা ময়লাযুক্ত। শার্টের অবস্থা পালটে গেছে ধূলি আর ঘামে। মাথায় উসকো খুসকো চুল। পায়ে নেই জুতা-স্যান্ডেল। পাশে একটি প্লাস্টিকের বড় বস্তা পড়ে আছে। ছেলেটি বসে বসে কি যেন খাচ্ছিল। হয়তো কোন নষ্ট খাবার। বুঝতে পারলাম- ছেলেটি টেকাই। কত মানুষ তার পাশ দিয়ে চলে যায়। একবারও কেউ দেখেনা। ফিরে তাকায় না।
আধুনিক সমাজের সভ্য মানুষেরা এদের মানুষ ভাবে না। অথচ এরাও বাঙালী। এদেরও অধিকার আছে। কিন্তু এরা স্বাধিকার পায়না। এরা অবহেলিত, অধিকার বঞ্চিত। এরা কখনও মানবাধিকারের আশা করতে পারে না। এরা সমাজে মিশতে পারে না। বাঁচার তাগিদে, ভাতের যোগাড়ে, জীবিকার খোঁজে কাগজ কুড়িয়ে বেড়ায়। ডাস্টবিন আর পথের ময়লা কাগজ, অকেজো লোহা আর প্লাস্টিক বিক্রির পয়সায় নির্ভর করে এদের প্রাণ। এক বেলা উদর পুরলে দু'বেলা খালি থাকে। জীবনের সাথে লড়াই এদের নিত্য সঙ্গী। তবুও আমরা বিত্তবান সমাজ এদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করি না।
এদের মনে হাজারো প্রশ্ন থাকে। থাকে বেদনার ঝড়। কিন্তু এরা তা ব্যক্ত করতে পারে না। কার কাছেই বা প্রকাশ করবে ! কেউ তো এদের সাথে মিশতে চায় না। এদের তো কোন বন্ধু নেই- যে সান্তনা দিবে - সমবেদনা জ্ঞাপন করবে - সহানুভুতি জানাবে। এরা মুক্ত ভাবনার কাছে পরাজিত। বিচ্ছিন্ন চিন্তা - চেতনার কাছে এরা পরাভূত। আর এরাই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় বেশী। আজ স্বাধীনতার ৪১' বৎসর পরেও এরা সমাজে মানসিক স্বাধীনতা পায়নি। পায়নি তাদের অধিকার। স্বাধীনতা যেন তাদের জন্য নয়।
অথচ এদের কারো কারো পূর্বপুরুষ ছিল মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ করেছে দেশ স্বাধীন করতে। তবুও এরা সমাজের বাইরে। কোন সরকার এদের ব্যাপারে ভাবেনি। আমরা জনগনও কোন কিছু বিবেচনা করি না। তাহলে কি এভাবেই চলতে থাকবে ?
আমাদের উচিত- এদের সহানুভূতি দেখানো। সামাজিকভাবে এদের সাহায্য করা। এদের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে সহযোগিতা করা। যেন এরা বুঝতে পারে- সমাজে এদের স্থান আছে। আছে স্বাধীনতা। এতে করে এরা সমাজের বোঝা হবে না। বরং দেশ ও জাতির স্বার্থে ব্যবহৃত হবে। কারণ, এদের মাঝেও লুকিয়ে আছে এমন সুপ্ত প্রতিভা, যা সঠিক মূল্যায়ন ও জ্ঞানের ঘসা-মাজায় পরিণত হতে পারে লেখক, কবি- সাহিত্যিক অথবা কোন বিজ্ঞানীর কিংবা ইঞ্জিনিয়ারের সত্তায়

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন