বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩

লিজাকে লেখা আমার শেষ চিঠি

প্রিয় লিজা!
জানিনা কেমন আছো তুমি? কোথায় আছো? জানিনা তোমার দিন পেরোয় কীভাবে? কেমনে তোমার রাত্রি নামে! জানতে খুব ইচ্ছে করে- এখন তুমি ঠিক মতো ঘুমোতে পারো কিনা! নাকি নির্ঘুম রাতের শেষে দু'চোখ জ্বালা করে! নাহ্.. এমন যেনো না হয়। আশা করি তুমি অনেক ভালো আছো। সুখে আছো। এমনটাই তো চাই আমি।

যে কথা বলতে চাইছিলাম সেটা হলো- তোমার সেলফোনের নাম্বারটা সব সময় আনরিচেবল। তোমাদের ঢাকার বাসায় অনেকদিন যাবৎ তালাবদ্ধ আছে। তুমি কি তোমার গ্রামের বাড়ীতেই আছো? না অন্য কোথাও? তোমার গ্রামের ঠিকানায় লেখা প্রায় দেড়শ' চিঠির একটারও উত্তর পাইনি। মনে হয় চিঠির বক্স খুলে দেখা হয়না তোমার! বড্ড অলস হয়ে গেছো তাইনা? নাকি আমি তোমার ঠিকানাটাও ভুলে গেছি, বুঝতে পারিনা!

লিজা!
হঠাৎ করেই তোমার এমন নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, আমাকে কিছু না বলে চলে যাওয়া- আমি আজও হিসেব মেলাতে পারিনা। আমি কি কোনও ভুল করেছিলাম নিজের অজান্তে, অবচেতন মনে? করলে আমাকে বলতে পারতে। আমি নিজেকে শুধরে নিতে সক্রিয় হতাম। আমাকে একটু জানানোর প্রয়োজনও মনে করলেনা! বড়ই দুঃখ পেয়েছিলাম। তবুও একটু খানি যোগাযোগ রাখলে মনে হয় তেমন একটা ক্ষতি হতো না তোমার।

কী জানো, মাঝে মাঝে আমি রাতে ঘুমাতে পারিনা। সারারাত জেগে থেকে দিনের বেলা অফিসে ঝিমাই। তোমার কথা মনে পড়লে আমি নিথর হয়ে যাই। মস্তিষ্কের নিউরন সেলগুলো শূন্য হয়ে যায়। শুরুর দিকে আদতেই দেবদাস হয়ে গিয়েছিলাম। চাকুরিটা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এখন অবশ্য নিজেকে কিছুটা হলেও সামলে নিতে পেরেছি বৈ কী।

প্রিয়তম!
হয়তো বা, এই শহরেরই কোনও এক অট্টালিকায় তোমার বাস। সময়ে আমাদের চলার পথও এক হয়ে যায়। তোমার পাদুকা ঝরা ধূলি হয়তো হাজারো জুতার দলুনির পর আমার পথের বাঁকে এসে থামে। তবুও আমাদের দেখা হয়না আর। হবেওনা আর মনে হয় কখনও।

যাই হোক, যেখানেই থাকো। ভালো থেকো। শুভ কামনা রইলো। সব সময়ে।

ইতি

অপ্রত্যাশিত কেউ



read from old Epistles: 27-11-2008

চিঠিটা অনেক আগের লেখা। সেদিন পুরানো একা ড্রয়ার খুলতেই কতোগুলো বাতিল খসড়া চিঠি পেয়েছিলাম। তার একটা অংশ। এখন সেই চিঠিগুলো পড়ে খুব হাসি পাচ্ছে আমার। কেমন ছেলেমানুষি করতাম আগে।

---------------------------------------------------------------------------
১১-১২-১৩
সুন্দর একটা তারিখ। ০১-০১-০১ এবং ০১-০২-০৩ থেকে শুরু করে ১২-১২-১২ এবং ১১-১২-১৩ পর্যন্ত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে বেশ কিছু তারিখ আছে। আজকের এই দিনটি এই ক্রমান্বয়ের শেষ দিন। এই রকম তারিখ এই শতাব্দীতে আর নেই। আমাদের পরের প্রজন্ম আগামী শতকে দেখতে পাবে আবার। এই ধরণের দিনগুলোতে মানুষ অনেক শুভ কাজের সূচনা করে থাকে। অনেক তরুণ-তরুণী আজকের এই দিনে তাদের বিয়ের বাগদান সম্পন্ন করবে। এর জন্য অনেক আগে থেকেই তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। এমন একটা দিনের স্মৃতি কে বা হারাতে চায়...


তবে.. যে কথাটা না বলতে পারলে আমার কিছুতেই ভালো লাগবে না তা হলো– আজকের এই দিনটা ইতিহাসের পাতায় সুন্দরভাবে স্থান করে নিতে পারতো। যদি না একটা ফাঁসির রায় কার্যকর করাকে স্থগিত করে দেওয়া হতো। হ্যাঁ, আজ ইতিহাসের কাগজে একটা কথা অবশ্য ঠাই পাবে। এই দিনে বিচারপতির আদেশ তার স্থান হারিয়ে ফেলেছে। "হাকিম নড়িলেও হুকুম নড়েনা" কথাটার বিপরীত উদাহরণ আমরা প্রতক্ষ করার মতো সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছি আজ। যাক সে কথা। বেশি ঢাক-ঢোল পেটালে এভাবেই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে পথের মাঝে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়। গন্তব্যের খুব কাছে পৌঁছাবার পরেও।

উৎসর্গঃ নেলসন ম্যান্ডেলা। আমরা গভীরভাবে শোকাহত।।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন