রবিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৪

অতিপ্রাকৃত গল্প: ৪ঠা জানুয়ারি


        

ঘটনাটা ঘটেছিল আজ থেকে এক বৎসর পূর্বে। আমার কয়েকজন বাঙ্গালী বন্ধু ঠিক করল– তারা এবারের থার্টি ফাস্ট নাইট সেলিব্রেট করবে ওকলাহোমার "হোটেল রুডলফে"। আমিও তাদের সঙ্গে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। এখানকার আরও কয়েকজন ফ্রেন্ড সিজান, লুসি, এলিজাবেথ, মন্টি ও টমসনও আমাদের সাথে আছে।
আমরা যথা সময়েই রুডলফে পৌঁছেছি। সব আয়োজন ঠিকমতোই করা হয়েছে। অনুষ্ঠান, আপ্যায়ন ও বিনোদনের কোথাও কোনও ঘাটতি রাখা হয়নি। আমরাও অনেক মজা করেছি। অনেক ড্যান্স হয়েছে। একটা কাণ্ড ঘটেছে। মজার কিনা বলতে পারবোনা। টমসন শ্যাম্পেনের বোতলটা এতো জোরে ঝাকাচ্ছিলো যে, একটুর জন্যে লুসির চোখে এ্যালকোহল ঢুকে যায়নি।


এরই মাঝে রাত তিনটা বেজে গেলো। আমরা ফিরে যেতে চাইলাম। কিন্তু মন্টি বাধ সাদলো। ও আরও কিছুক্ষণ থাকতে চাইলো ওখানে। মনে হয় কয়েক পেগ বেশিই গিলে ফেলেছে। এখানকার ছেলেমেয়েরা এতো মদ্যপ হতে পারে তা আগে আমার জানা ছিলোনা। যাই হোক আমরা তাকে কোনও রকমে গাড়িতে নিয়ে এলাম। সিজান ড্রাইভ করছে। সবাইকে যার যার বাসায় পৌঁছে দিতে হবে তাকে। বাসা থেকে না বলে তার বড়ো ভাইয়ের মাইক্রোটা এনেছিল। এতো তাড়াহুড়ার মূলে এটাই কারণ হতে পারে। কিন্তু তাকে নিয়েই আমার ভয়। কখন আবার রাস্তা থেকে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠিয়ে দেয় অথবা নদীর পানিতে ডুবিয়ে দেয় তা সে নিজেই হয়তো বুঝে উঠতে পারবেনা। "উইলিয়াম টাওয়ার" পেরিয়ে আমাদের মাইক্রো হাইওয়েতে চলতে শুরু করেছে। সিজান তাড়াহুড়া সত্বেও ইচ্ছে করেই ধীরে ড্রাইভ করছে। মন্টি ঘুমিয়ে পড়েছে। বাকিরা সবাই জোক করছে। হাসাহাসি করছে। আমি রাতের নদী দেখার লোভ সামলাতে পারছিলাম না বলে বাইরে তাকিয়ে আছি। তুষারের বৃষ্টি নদীর উপরে কী অপরূপ সৌন্দর্য মাখিয়ে দিয়েছে। যেনো থ্রিডি মুভির কোনও চিত্র আমার সামনে ভেসে আছে। আমাকে বাইরে তাকিয়ে থাকতে দেখে এলিজাবেথ বলল- "কিরে ফুয়াদ, ওভাবে মনমরা হয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কার কথা ভাবছিস?"

-নাহ, এমনিতেই নদীর পানি দেখছিলাম।
-জানি তো। শোন, তোর ওই নাওমি এতোদিনে পঁচে গলে মাটির নিচের বরফ মেশানো পানির সঙ্গে মিশে গেছে। ওর কথা ভেবে লাভ নেই। নতুন কাউকে খুঁজে পাস কিনা তাই দেখ!
ওর কথাগুলো শুনে নাওমির কথা খুব মনে পড়ে গেলো আমার। খুব খারাপ লাগছে। নাওমি সাঁতার জানতোনা। প্রায় এক বৎসর পূর্বে। মাতাল হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলো একদিন। ৪ঠা জানুয়ারি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নদীতে পড়ে তার গাড়িটি। নাওমি আর বেঁচে ফেরেনি। আমি তাকে ভুলতে পারিনা। কখনও পারবো কিনা জানিনা। জানতে চাইওনা। ওকে ভুলতে পারলে হয়তো বড়ো বাঁচা বেঁচে যেতাম। কিন্তু একটু শান্তি পেতাম। তাহলে আর আমার মন নিত্য নিষ্পেষিত হতো না। একটু ঘুমুতে পারতাম। আমার নির্ঘুম চোখের জ্বালাপোড়া রোগটা কমে যেতো। কিন্তু নাওমিকে যতোই ভুলতে চেষ্টা করেছি। ততোই আমি যন্ত্রণায় ডুবে মরছি। ওর আত্মা আমার মনের খবর জেনে যায়। আর অমনি আমার মনে তার স্মৃতিগুলোকে স্পষ্ট করে তোলে। তখন আমার মর্মপীড়া আরও প্রকট হয়ে দেখা দেয়।
তীব্র ঝাঁকুনিতে আমার সম্বিৎ ফিরে এলো। সবাইকে চুপ মেরে থাকতে দেখলাম। কী হয়েছে! কী ঘটেছে! একটু পরেই সবাই চেঁচামেচি শুরু করে দিল। আমাদের মাইক্রোর চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। গাড়ির হেডলাইটের দুটো সরু আলো ছাড়া কোথাও কোনও আলো নেই। পাশে কোনও নদী নেই। তুষার নেই। কোনও সীমারেখা নেই। হালকা চাঁদের আলো নেই। যেনো কোনও স্যাঁতসেতে বালুর মাঠে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে একটা মাত্র গাড়ী ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। মন্টি ঘুম থেকে জেগে উঠে চোখ বড়ো বড়ো করে চারপাশে তাকিয়ে কিছু বুঝে ওঠার বৃথা চেষ্টা করছে। সিজানের মুখে কোনও কথা ফুটছেনা। সে হতভম্ব হয়ে বোকার মতো বসে আছে। কী থেকে কী হয়েছে হয়তো তারই হিসেবে কষছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- এটা কোথায় সে আমাদের নিয়ে এসেছে! সে বললো- একটু আগেই তো সে হাইওয়েতে ছিলো। "মাউন্ট এ্যাবি" পেরিয়ে কিছুদূর সামনে এগুতেই দেখলো রাস্তার মাঝে খুব দ্রুত কিছু কুয়াশা জমছে। ভাবলো কুয়াশাই তো.. কিন্তু কুয়াশার কুণ্ডলীতে প্রবেশ করেই দেখে তারা এইখানে এসে পড়েছে কীভাবে যেনো! সঙ্গে সঙ্গে হার্ড ব্রেক কষে সে। পুরোদস্তুর ভ্যাবাচেকা খেয়েছে সিজান। কিন্তু ওর কথা শুনে আমরা হো হো করে হেসে উঠলাম। বললাম- মাদকে তোমার মাথা গেছে। তাই কল্পনায় এই সব আবোল তাবোল জিনিস দেখেছো। ইশ্বর.. এ কোথায় নিয়ে এলো ও আমাদের। এমন সময় আমার সেলফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রীণের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। Calling... ভাসছে। কিন্তু কোনও নাম্বার বা কারও নাম শো করছে না। অবাক করা কাহিনী তো.. কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রিসিভ করে কানে ঠেকালাম। একটা মেয়েলি অথচ খসখসে কণ্ঠ শোনা গেলো।
-কেমন আছো?
কণ্ঠটা কেনো জানি খুব পরিচিত মনে হলো। আমি বললাম- ভালো, কিন্তু তুমি কে?
-এলিজাবেথকে ফোনটা দাও।
-তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দাওনি।
-প্রয়োজন মনে করিনি.. তাই দিইনি। এলিজাবেথকে ফোন দিবে কিনা তাই বলো..
ওই প্রান্তের শুকনো এবং শীতল কণ্ঠে আমি ভয়ংকর কিছুর আভাস পেলাম। আমি আর দেরি না করে এলিজার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলাম। ওরা সকলে আমার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু আমার কাউকেই কিছু বলার বা বোঝাবার ছিলো না।
এলিজাকে দেখলাম কোনও কথা বলছে না। বরং ওপাশের কথাগুলো শুনছে আর ছানাবড়া হয়ে যাওয়া চোখ দু'টো দিয়ে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আরকবার উইন্ড স্ক্রীণ পেরিয়ে বাইরে কী যেনো খুঁজে বেড়াচ্ছে।
কোনও এক অজানা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকা এলিজাবেথ কম্পিত কণ্ঠে বললো- "নাওমির ফিরে এসেছে।"
টমসন সোজা হয়ে বসে জিজ্ঞেস করে -নাওমি ফিরে এসেছে মানে?
-হুম.. তার আত্মা ফিরে এসেছে। সে এখন আমাদের আসে পাশেই আছে। সে-ই আমাদের চারপাশে সব অন্ধকার বানিয়ে রেখেছে। সে আমাকে বলেছে- তার সম্পর্কে আমি যা বলেছি- সব সে শুনেছে। এরপর থেকে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করার কথা চিন্তা করার আগে একবার আজকের কথা ভাবতে বলেছে। নইলে সে আমাদের মেরে ফেলবে।" আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো- "তোর সাথে সে মিট করতে পারে। ৪ঠা জানুয়ারি। আগামী শুক্রবার।"
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- আমার সাথে? কেনো?
-হ্যাঁ। তোকে চিবিয়ে খাবে। যত্তোসব.." বলেই ভেংচি কাটে এলিজা। এই কঠিনতম বিপদের মাঝেও সে কৌতুক করতে ভুলেনা।
আমি বলি- দেখ আবার তোকে বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে কিনা..
যাই হোক.. এলিজার কথা শুনে আমরা নির্বাক হয়ে যাই। চরম বিষ্ময় ও ভয় কী জিনিস, তা আমাদের চেহারার প্রতি তাকালে যে কেউ পড়তে পারতো। কিন্তু পরিহাস। এখানে আমরা ছাড়া আর কেউ-ই নেই।
মন্টি বাচ্চা মেয়ের মতো কান্না শুরু করে দেয়। সিজান তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে- কেঁদে কোনও লাভ হবেনা। আমরা এখান থেকে মুক্তির একটা না একটা পথ পেয়েই যাবো। লুসি বলে- যাহ.. বছরের শুরুটাই ভালো হলো না। এইবার কপালে শনি আছে।
এলিজা আমার পাশ ঘেষে বসে বলে- দেখতো, কয়টা বাজে। ওর গা থেকে আসা পারফিউমের গন্ধে আমার নিঃশ্বাসগুলো যেনো একটু হালকা মনে হলো। ভুলেই গেলাম আমরা একটা ভয়ানক বিপদের সিঁড়িতে দণ্ডায়মান। একটু পরই মনে হলো- ধূর.. এখন তো রোমান্সের সময় নয়। হাত ঘড়িতে তাকাতে গিয়ে বুঝতে পারি ঘড়িটা রুডলফের কোনও এক কামরায় টেবিলের উপরে অযত্নে পড়ে আছে। খুলে গিয়েছিল। আসার সময় খেয়াল করে সঙ্গে নেওয়া হয়নি। থাক। ওটা ওখানেই পড়ে থাক। মোবাইলে দেখি সোয়া চারটা বাজে।

যে করেই হোক, আমাদের এখান থেকে বেরুবার পথ তৈরি করতেই হবে। আমি ভাবলাম এমনও তো হতে পারে যে, আমরা একটা কুয়াশার ভেতরে অবস্থান করার কারণে সব কিছু অন্ধকার দেখছি। হতে পারে আমরা কাউকেই দেখছিনা। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে থেমে থাকা এই গাড়িটা হয়তো অন্য সকলেরই নজরে পড়েছে। তারা আমাদের দেখছে। আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে তাদের বাহনগুলো। কিন্তু আমরাই কেবল তাদের দেখছিনা। এই ভাবনা হতেই আমি সিজানকে জিজ্ঞেস করলাম- সিজান, তুই কি বলতে পারবি ঠিক কখন থেকে এমন অন্ধকার দেখলি?
-কুয়াশা ভেদ করার পর পরই
-হুম
-কি বুঝলি?
-কিছুনা, তুই গাড়িটা স্টার্ট দে। খুব ধীরে সামনে নিতে থাক। আশা করি কিছু একটা হবে।
-ওকে
আমার অনুমান সত্যি হলো। কিছুদূর অগ্রসর হবার পর অবশেষে আমরা পৃথিবীর আলো দেখতে পেলাম। আমাদের মাইক্রো চলতে শুরু করলো ফের। সকালের আলো ফুটতে শুরু করেছে পূবের আকাশে। আমি ভাবছি অন্য কিছু। ৪ঠা জানুয়ারি কী ঘটতে পারে!!!
-----------------------------------------------------------------
ক্লান্ত সূর্যটা আকজের মতো বিদায় নিয়ে জ্যাকভিল স্ট্রীটের শেষ মাথায় ডুব দিয়েছে আরও কিছুক্ষণ আগেই। বায়ে "বিসটেন" নদীর পানির উপর হিমেল ধোঁয়া বইছে। আর ডান পাশে সারি সারি পাহাড়। একটারও নাম মনে আসছেনা। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণার দু'পাশে মন্থর গতিতে চলা স্রোতের পানিতে ক্রমেই বরফ জমতে শুরু করেছে। নাহ.. এই ক'দিনে অস্বাভাবিক আর কিছুই ঘটেনি। চোখে পড়েনি অদ্ভুত কিছুই। আজ কথিত সেই ৪ঠা জানুয়ারি। নাওমির মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ও সম্ভবত আজ আমার সাথে দেখা করবে। কিন্তু তার কোনও সম্ভাবনাই চোখে পড়েনি, মনেও জাগেনি। যাই হোক.. আজ আপিস ছিলো না। সারাটাদিন বলতে গেলে ঘুমিয়েই কাটিয়েছি। বিকেলে এলিজার সাথে একটু ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। তখনই মনে হয়েছে নাওমির কথা। সেই থেকে এক ধরনের উৎকণ্ঠায় আছি। গত কয়েকদিন থেকে আমার সাথে ঘটে যাওয়া সকল কিছু মনে মনে ভাবছিলাম আর আনমনে ড্রাইভ করছিলাম। বাসায় গিয়ে আবার একটা ঘুম দেবো ভাবছি। মিউজিক বাজছিলো-
প্লেয়ারের মিউজিক থেমে গেছে। গান শেষ হয়ে গছে। বাইরে আঁধার নামতে শুরু করেছে একটু একটু করে। উইন্ডশিল্ডের বিন্দু বিন্দু কুয়াশা ক্রমেই ফোঁটা ফোঁটা পানিতে রূপ নিতে শুরু করেছে। আমি এখন সেই পথটা অতিক্রম করছি যেখানে থার্টি ফার্স্টের রাতে আমরা অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সহসা কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো। হাত-পা কেমন আড়ষ্ট হয়ে আসছে। আমার বুঝে আসলো না- সেই রাতের কথাটা মনে হওয়া থেকেই এর উৎপত্তি? না সেই রাতের ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি বলে?
হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা। পেছন থেকে আসছে আওয়াজটা। ঠিক আমার পেছনেই। পরিচিত একটি কণ্ঠস্বর। গুনগুন করে গাইছে। একটু আগেই আমার শোনা গানটার পুনরাবৃত্তি করছে কণ্ঠটা।
///পথে চলে যেতে যেতে কোথা কোনখানে
তোমার পরশ আসে কখন কে জানে
কি অচেনা কুসুমের গন্ধে
কি গোপন আপন আনন্দে
কোন পথিকের কোন গানে///
আমি না শোনার ভান করে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করে যাচ্ছি। দ্রুত কোথাও থামতে হবে আমাকে। একটু একটু করে ঘামছি।
-গাড়িটা থামাও..
আমি চালিয়েই যাচ্ছি।
-গাড়ি থামাও বলছি।" কটমট কণ্ঠ নাওমি'র
ও আমার চালাকিটা ধরে ফেলেছে। ওর সিক্সথ সেন্সটা ভালোই কাজ করতো। এখনও কাজে দেয় মনে হয়। অগত্যা ব্রেক কষতে হলো। একটু ভয় নিয়ে লুকিং মিররে তার দিকে তাকালাম। মায়াবী চোখ। নীল নীল চোখ দু'টো আগের চাইতে আরও আকর্ষণীয় লাগছে। আমি কি তার প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ছি?
-গাড়ি থেকে নেমে আমার সাথে চলো..
-কোথায়?" আমার অবাক কণ্ঠ। তাতে ভয় নেই
-যেখানে আমি যাচ্ছি এখন
নাওমি নিঃশব্দে হাঁটছে। কথা না বাড়িয়ে সাথে আমিও পথ চলছি। মাঝে মাঝে পেছনে তাকিয়ে পালিয়ে গেলাম কিনা দেখে নিচ্ছে। আগের চেয়ে অনেক সুন্দর লাগছে তাকে। অবয়বখানা রক্তরাঙা লালিমার ছোঁয়ায় আবিষ্ট। এজন্যেই বোধ হয় লোকে বলে- পরলোকে গমনের পর মানব দেহের ত্রুটিগুলো বিনাশ হয়ে যায়। আর শ্রী যুক্ত হয় চেহারায়।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা বাগান বাড়ির আঙিনায় পৌঁছুলাম। পাশেই পাহাড়ি ঝর্ণা নেমে গেছে অনেক নিচে। কিছু বুনো ফুল ফুটেছে এখানে সেখানে। পরিবেশটা একটু অন্যরকম মনে হলো। সামনেই একটা উঠোন দেখতে পাচ্ছি। উঠোনের মধ্যভাগে রয়েছে একটাই মাত্র গাছ। কিন্তু এর ডালপালা পুরোটা উঠোন জুড়ে বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে আছে। একেক ডাল থেকে একেক ধরণের বিচিত্র রঙের ফুলেরা উঁকি মারছে। এমন বৃক্ষের কথা আমি তরুলতার ইতিহাসেও পাইনি আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে।
নাওমি আমার দিকে ফিরে মুচকি হাঁসলো একবার। কিন্তু সেদিকে আমার মন নেই এখন। কোন পথে হেঁটে কীভাবে এখানে এসে পড়েছি, নাওমির কথা ভাবতে ভাবতে তাও দেখা হলোনা। ডেনমার্কের ওকলাহোমা'য় এমন অদ্ভুত ও আকর্ষণীয় মনোমুগ্ধকর একটা বাগান বাড়ি থাকতে পারে, তাতো আমার জানা ছিলোনা। কখনও শুনিওনি এমন কিছু। মানচিত্রের কোত্থাও এর অস্তিত্বের ছাপচিহ্ন পাইনি। গুগল আর্থেও না। আমি কি তাহলে ওকলাহোমায় নেই? আমি এখন কোথায় অবস্থান করছি!!!
উৎসর্গ ও স্মরণঃ প্রয়াত ঋষি ব্লগার ইমন জুবায়ের ভাই। তার শেষ পোস্ট "অতিপ্রাকৃত গল্প: সতরই জুলাই" থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই পোস্ট লেখার প্রয়াস। এটা আমার পক্ষ থেকে তার প্রতি হৃদয় নিংড়ানো অঞ্জলি ও বিনম্র শ্রদ্ধা স্বরুপ থাকবে। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত কারও জীবনের সঙ্গে এই গল্পের কোনও ধরণের মিল পাওয়া গেলে লেখক দায়ী নয়।
তবে গল্পটি আমার পূর্বের দু'টি পোস্ট- 'Geeplus-এর স্ট্যাটাসটা ছিল মাত্র তিন লাইনের.. কিন্তু... ' এবং 'বিস্ময়াবহ ' এর বর্ধিত রূপ।
                              সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ মাদক জীবনের জন্য ক্ষতিকর।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন