ঘুমটা হঠাৎ করেই ভেঙ্গে গেলো। অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম এমনটা নয়। কিছুক্ষণ আগেই তো বাতি নিভিয়েছিলাম। যাই হোক, আবার ঘুমাতো চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘুম তো আর আসছেনা। তন্দ্রার দল চোরপুলিশ খেলছে যেনো। লেপের ভেতর খুব গরম অনুভব করছি। ওটা পায়ের কাছে ফেলে একটা পাতলা কম্বল টেনে নিলাম।
বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর। শ্রবণ শক্তি হঠাৎ এতো সক্রিয় হয়ে উঠলো কেনো? কোথা থেকে যেনো একটা শব্দ আসছে এইদিকে। খুব কাছে নয়, আবার বেশ দূরেও না। কিছু একটা থেঁতলানোর চাপা শব্দ। একটু পর পর। আওয়াজটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কিন্তু এর মূল উৎস কি! তা শত বার ভেবেও বুঝতে পারলাম না। টপ করে এক ফোঁটা পানি পড়ার শব্দ হলো।
হুম.. ওয়াশ রূমের কল থেকে বালতিতে পড়েছে। কিন্তু আমাকে ভয় পাইয়ে দেবার জন্য এক ফোঁটা পানিই বুঝি যথেষ্ট ছিলো! মাথাটা পুরোপুরিই কম্বলের নিচে লুকিয়ে নিলাম। উহ.. এখনতো আরও বেশি গরম লাগছে।
আমার শরীরের উত্তাপ যেনো একটু একটু করে বাড়ছে। ঘামতেও শুরু করেছি। অন্যদিকে ভয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে আমার। নিজের নিশ্বাসের আওয়াজকেও শুনতে ভয় লাগছে। ভাবতেও অবাক লাগে। অশরীরি কিছুর অস্তিত্ব কল্পনা করে আমি আতংকিত। অথচ জীবনে ভুত-প্রেত বলতে কিছুই দেখার দুর্ভাগ্য অর্জন করতে পারিনি। বরং নিস্তদ্ধ-নির্জন ও নিকষ অন্ধকারের কোনও বিশেষ মুহূর্তে ভীতিকর অনুভূতির সাথে কেবল পরিচিতই হয়েছি। অসংখ্যবার। কী অদ্ভুত!
জনবহুল, কোলাহল মুখরিত এই ঢাকার কোথাও গভীর রাতেও মানুষের সমাগম থাকে। কিন্তু রাতের আবাসিক এলাকাগুলো ঠিকই গ্রাম্য একাকিত্বের মুখোশ পরে ভৌতিক চিত্র ধারণ করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। রড-সিমেন্টের তৈরী কিছু বিশাল বাকসো ছাড়া বাকী সবই গা ছমছম করা পোট্রেট হয়ে দেখা দেয়। নিচের কংক্রিটের ছাল ওঠানো ফাঁকা পথ দিয়ে একটা রিক্সা ঝকর ঝকর শব্দ তুলে দ্রুত চলে যাচ্ছে। পাতলা আওয়াজ শুনে মনে হলো রিক্সাটা যাত্রীবিহীন। যেনো ভুতে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অথবা একলা পথে ভুতই চালাচ্ছে ওটা।
অনেক দূর থেকে দূরপাল্লার বাসগুলোর যান্ত্রিক চিৎকার অনেকক্ষণ পর পর ভেসে আসছে। ওরা হর্ণ বাজিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়ে যাচ্ছে যেনো। রাতের অর্ধপূর্ণ যাত্রী নিয়েই আলকাতরায় প্রোথিত মহাসড়ক মাড়িয়ে ছুটছে দূরের গন্তব্যে।
দূরে কোথাও ডেভলপার এরিয়ায় পাইলিং মেশিন তার কর্তব্য পালনে ব্যস্ত। আশপাশের মানুষের ঘুম কেঁড়ে এই রাত দুপুরেই যেনো তার কাজের মোক্ষম সময়। তিন সেকেন্ড অন্তর অন্তর আসা তার আওয়াজটাও ঠিক ঠিক চিনতে পারলাম।
নাহ.. অনেকক্ষণ আগে শুনতে পাওয়া সেই থেঁতলানোর শব্দটা আর আসছেনা। কখন যেনো থেমে গেছে, বলতে পারছিনা। ছাদে যেতে মন চাচ্ছে খুব। না.. থাক। এই শীতে ছাদে যাবোনা। ডায়েরিটা নিয়ে বসি। কিছু লিখে রাখি..
বাতায়নের চকচকে কাঁচ ভেদ করে কচকচে মিষ্টি রোদ চোখে এসে পড়তেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। প্রতিটা স্বপ্নের পর কিছু একটা সঙ্গত কারণকে সামনে রেখে ঘুম ভেঙে যায় কেনো তা আমার জানা নেই। বলা যায় স্বপ্নের ইতি টেনে ধরা হয় ঘুম ভাঙা দিয়ে। ঘুমের ঘোরে কে স্বপ্ন দেখায়। কে-ই বা স্বপ্নের ইতি টানে।
druft 0.2.0
January 13, 2014
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন