বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৬

জানোয়ার

বাতাসের শোঁ-শোঁ গর্জনের মাঝেও অন্য কিছুর শব্দ আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করছিলো। মধুর আওয়াজ নয়, আশার বাণীও নয়, নয় কোনও মানুষের কথা। অথচ তা কোনও পাখির ভাষাও ছিলো না। আশেপাশে কতোগুলো পোকামাকড় ছিলো। ওগুলোর হাতে বিষ, পায়ে বিষ, বিষ ওগুলোর মুখে; সর্বশরীরে। চারিদিকে ওদের ছুটোছুটির শব্দ অত্যন্ত ভয়ংকর শোনা যাচ্ছিলো। চারিধারে ওরা লম্ফঝম্ফ করে বিষ ছুড়ছিলো। এই জগৎটা যেনো কেবলই ওদের, অন্য কারও বাস করার অধিকার নেই এতে।


আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো
খুব ধীরে এবং সতর্কতায়, যেনো আমি জেগে না উঠি
অনুধাবন করতে না পারি কিছুই
যেনো না ছুঁতে পারি চিৎকার করার সুযোগটুকুও।
যখন আমার জ্ঞান ফিরলো, নিজেকে আবিষ্কার করলাম অনেক উঁচুতে, মাটির দিকে ধাবমান
পতনের গতি মাপবার কোনও যন্ত্র ছিলো না সাথে
অবকাশটুকুও যে হারিয়েছি আমি
যখন আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো একটি ভবনের ছাদ থেকে
নিজেকে আটকাবার জন্য পাইনি কিছুই, দু’বাহুতে পেঁচিয়ে যাওয়া পবনের গুল্মলতা ছাড়া।
আমি নির্বিকার
নিজের ধ্বংসাবশেষটুকু খুব স্পষ্টভাবে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে
তার চতুর্ধারে আরও কিছু মুখের চকচকে হিংস্র চোখ উপরের দিকে তাকিয়ে
মুখোশের আড়ালে যাদের পৈশাচিক হাসি খেলে, হাতে গান পাউডারের প্যাকেট।
বারবার অনুধাবন করছি- এই বুঝি আমার পতন ঘটবে
কতোকাল ধরে বাতাসের ডাল বেয়ে নামছি, কতোকাল এভাবে নিচের দিকে পড়তে থাকবো, তার হিসেব আমায় জিজ্ঞেস করলে জবাব পাবে না।

আমি শুনতে পাচ্ছি
এখনও দিব্যি শুনতে পাই
কিছু অসুর, কিছু দানবের হুংকার
পঙ্কিলতার আধিক্যে যাদের বিদঘুটে শরীর কালো হয়ে গেছে
অতীকায় এই রাক্ষসগুলো অশিক্ষিত, মূর্খ, জ্ঞানপাপী অথবা মগজহীন
এরা ওঠবস করে পাতালপুরের ইশারায়। যেখানে থাকে কিম্ভুতকিমাকার এক ডাইনী। মাথার চুল তার সাদা পাটের মতো। স্থুল নাসিকার অধিকারিনীর ভ্রুহীন চোখের পাপড়ী নেই ।
ওষ্ঠের দু’পাশ বেয়ে শুকনো রক্ত লেগে আছে তার
রাক্ষসরাণীর হুকুম- মানবজাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে হবে
যে করেই হোক, সুশিক্ষা থেকে ওদের বঞ্চিত করো।

আজকাল আমার চারপাশে কিছু খুনির আবির্ভাব ঘটেছে
ভাড়াটে খুনি।
ওরা সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে মানব খুনের নেশায় মেতে ওঠে।
বনের পশু, সাপ-বিচ্ছু, আর বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ ছাড়া মানব সন্তানকে কেউ হত্যা করতে পারে না। কিন্তু জানোয়ারদের কাছে মনে হয় সেটাও সম্ভব। ওদের হাতে হাতে একটা করে বোতল। খুব শক্ত করে মোড়ানো ছিপির মুখ দিয়ে সলতে বেরিয়ে আছে সাপের লকলকে জিহ্বার মতো। ভেতরে জ্বালানী পদার্থ। পে-ট-রো-ল। আর পকেটে দিয়াশলাইয়ের কাঠি।

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন