বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৬

একা

সিমেন্টের তৈরী ছোট বেঞ্চিটা খালি পড়ে আছে।
একটু আগেও তাতে কেউ বসে ছিলো। একটা ছেলে।
বাদামের খোসাগুলো বড়ো নির্লজ্জ। ছড়ানো-ছিটানো।
রোদ্রের তাপ আর কতোক্ষণ থাকবে! বাতাসে শীতল অনুভব ধীরে ধীরে বাড়ছে। অনেকটাই থেমে গেছে কোলাহল।
সূর্যের স্থানটা বুঝি চন্দ্র এসে দখলে নেবে একটু পরেই।


নিঃসঙ্গ বেঞ্চিটার সামনে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পানি আর পানি।
ঝিরিঝিরি বাতাসে ঈষৎ কম্পিত পানির ক্রমাগত ছোট ঢেউয়ের দল এক কথায় দারুণ..
পশ্চিমের আকাশে অনেক চিল জমা হয়েছে আজ।
যেনো লাল-হলুদের মাঝে কালোর মেলা বসেছে।


এক পা দু’পা করে ছেলেটা সামনে এগিয়ে গেলো। নামলো জলীয় মেঝেতে।
পানির গভীরতা মাত্র ৩০ সে. মি.। ডুবন্ত ছোট-বড়ো পাথর একটার উপরে আরেকটা।
পানির উপরে খানিক নীল আবরণ জমেছে। কিছু ক্ষুদ্র পোকা। ওরা উড়ে-ভাসে।
বেঞ্চিটা খালি পড়ে আছে। দুঃখী একাকী।
তবে ওইপারে কেউ দীপ জ্বেলেছে। বাদাম ওয়ালা। নিজস্ব একটা আলো আছে তার।
সবখানে আলো থাকবে এমন কোনও কথা নেই। তাই একটু খানি ছোট্ট আলো প্রয়োজনে অনেক কিছু। নইলে আঁধারে বাদামের বিকিকিনি হবে কী করে।
প্রদীপের ছোট শিখা। কম্পমান পানিতে তার লাল রঙা সরু রেখা।
ওটা দিনের শেষে শত শত মানুষের আনন্দের অর্থবহ বাক্যগুলোর “দাঁড়ি” চিহ্ন।
অথবা পানির ছাদে আঁকা জলরঙের কতোগুলো ছোপ কাটা লাল দাগ–
আমাদের হাজারো বেদনার অর্থহীন কথাকে যেনো কেউ মুছে ফেলে।
ও একা। তবুও এই অল্প পানিতে হেঁটে অনেক দূর যেতে মন্দ লাগছে না তার।

চার পাশে পানি। গোলাকার ক্ষেত্র। মাঝখানে সবুজ। বৃত্তাকার সমভূমি।
গোলকের ভেতর গোলক। পানির ভেতরে ঘাস। আরেকটু গেলেই বুঝি ঐশী মহিমার অপার হাতছানি।
চতুষ্কোণ স্তম্ভ। চারিপাশে তার উদীয়মান রোশনি।যেনো–
আকাশের মাথায় ঝুলন্ত চাঁদকে ছুয়ে দিয়েছে।
সদা দন্ডায়মান। কালের সাক্ষী।
শেকড়ে তার প্রোথিত লক্ষ প্রাণের তাজা রক্ত। শিখর চির উন্নত।

তুমি মহান
তুমি তুমিই।
তুমি তোমারই মতো। আমার মতো নও।
এ জগতে কেউই নয় কারও মতো
এমন-ই
সবাই নিজেকে আপনার মতো সাজিয়েই বৃত্তবন্দী হয়।
একা। বড়ো একা। শেষ প্রহরের একাকিত্বে ঘেরা স্মৃতিস্তম্ভের মতো...

০৭.০৩.২০১৪

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন